নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ৩ দফা দাবীতে ইন্টার্ন ডক্টর্স এসোসিয়েশনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির আজ দ্বিতীয় দিন। রোববার (০১ নভেম্বর) সকালে হাসপাতালে গিয়ে কোন ইন্টার্ন চিকিৎসককে কাজে দেখা যায় নি। তবে রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানান, গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে কোন ডাক্তারই তাদের খোঁজ খবর নেয় নি। এমনকি কোন চিকিৎসকরে দেখাও তারা পাননি। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সাধারনত ২৪ ঘন্টাই রোগীর পাশে থাকতো। কিন্তু কর্মবিরতির কারনে এখন আর তারা কেউ সেখানে নেই। এদিকে হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও তারা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও শেবাচিম হাসপাতালে বর্তমানে ২২৪ টি পদের স্থলে মাত্র ৯১ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু এটি ৫ শত শয্যার হাসপাতালের রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত পদ ছিলো, বর্তমানে হাজার শয্যার এ হাসপাতালে দেড়হাজারের মতো রোগী থাকলেও সেখানে পদের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। তারওপর শূন্যপদ পূরনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইন্টার্নদের দাবিগুলো হলো, ডাঃ মাসুদ খান কর্তৃক দায়েরকৃত প্রহসনমূলক মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন মাধ্যম কর্তৃক হয়রানি অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করা, ডাঃ মাসুদ খান এর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ এর সুষ্ঠু বিচার করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারকৃত অসত্যের জন্য মানহানির বিচার করা। উল্লেখ্য গত ২১ অক্টোবর শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-৪ এর রেজিষ্ট্রার ডাঃ মোঃ মাসুদ খান, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সভাপতি সজল পান্ডে এবং সাধারণ সম্পাদক ডাঃ তরিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে আরো ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে তার ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগ এনে পরিচালক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর দিন ২২ অক্টোবর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মেডিকেলের সামনে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কমিশন নেয়ার অভিযোগে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন ডাঃ মাসুদ খানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। এর কয়েকদিন পরে ডাঃ মাসুদ খান কোতোয়ালি থানায় ওই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার খবর পেয়ে ২৯ অক্টোবর দিবাগত রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করে এবং কর্মবিরতির ডাক দেয়। কিন্তু মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ, হাসপাতাল পরিচালক ও উপ-পরিচালকের হস্তক্ষেপে আড়াইঘন্টার আলোচনা শেষে রাত আড়াইটায় কর্মবিরতি থেকে সরে আসে ইন্টার্নরা। সেসময় ইন্টার্নরা কিছু আল্টিমেটামও বেধে দেয় কর্তৃপক্ষকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ঘোষনা দিয়ে কর্মবিরতি শরু করে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন জানান, দুই পক্ষকে নিয়ে আজ আলোচনায় বসা হয়েছিলো। কিন্তু কোন পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সমঝোতা হয়নি। তবে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান পরিচালক। উল্লেখ্য এ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় দেড়শত ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছেন। যারা করোনাকাল থেকে শরু করে এ অব্দি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আর ডাঃ মাসুদ খানও অতিরিক্তি দায়িত্বপালনসহ করোনাকালে সবথেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন এ হাসপাতালে এবং রোগীদের সাথে।
Leave a Reply